
রফিক মাহমুদ,উখিয়া::
কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপানসহ মানবাধিকার সংবেদনশীল সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগ-আশঙ্কার মধ্যেই সোমবার দিনভর মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপি’ডতে প্রত্যাবাসন বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি বা ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাত ৯টায় বৈঠকের ফল জানতে চাইলে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান বলেন, আজকের বৈঠক মুলতি হয়েছে। কালও আলোচনা হবে, দেখা যাক কি হয়। মিয়ানমার সরকার আগেই জানিয়েছে, আসন্ন ২২শে জানুয়ারি বাস্তুচ্যুত ৪৫০ হিন্দু শরণার্থীকে গ্রহণের মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতে চায় তারা। বাংলাদেশও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির (বাইলেটারাল অ্যারেঞ্জমেন্ট) বাধ্যবাধকতা মানতে চায়। কর্মকর্তারা বলছে, গত ২৩শে নভেম্বর সই হওয়া ওই চুক্তি মতে, দুই মাসের মধ্যেই (২২শে জানুয়ারি) বাস্তুুচ্যুতদের রাখাইনে ফেরানোর কাজ শুরুর প্রস্তুতি রয়েছে ঢাকার। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া একতরফাভাবে বাস্তুচ্যুত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে গ্রহণে মিয়ানমারের আগাম ঘোষণা নতুন জটিলতার আশঙ্কা তৈরি করেছে। গত কয়েক মাস ধরে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যেসব বৈঠকাদি হয়েছে তার কোথাও আলাদাভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে ফিরিয়ে নেয়ার আলোচনা হয়নি। বরং ২০১৬ সালের পর বাস্তুচ্যুত রাখাইনের হিন্দু-মুসলিম সব নারী-পুরুষ ও শিশুদের ফেরানোর আলোচনাই হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা সম্প্রতি মানবজমিনকে বলেন, ২০১৬ সালের পর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাছাড়া আগে থেকে এখানে রয়েছে প্রায় ৩ লাখ মিয়ানমার নাগরিক। এ পর্যন্ত ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্ভব হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এর মধ্য থেকে ২০১৬ সালের পরে আসা ১ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দেয়া হবে নেপি’ডকে। তবে গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেই ১ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে মর্মে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। উ™ূ¢ত পরিস্থিতিতে ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারাই নির্ধারিত ডেটলাইনের মধ্যে প্রত্যাবাসন কাজ শুরু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। তাছাড়া নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে রাখাইন এখনও প্রস্তুত না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ রয়েছে ঢাকা এবং আন্তর্জাতিক মহলের। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনগুলোর রিপোর্ট মতে, এখনও রাখাইনে আগুন জ্বলছে। প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাস্তুচ্যুতরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রতিদিনই বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। রোহিঙ্গা স্রোত কমলেও তাদের সীমান্ত পাড়ি দেয়া থেমে নেই। তাছাড়া রাখাইনে ফেলে আসা রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৮শ’ গ্রামের অর্ধেকের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৮ গ্রাম একেবারে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়েছে। ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো রাখাইন পরিস্থিতি মিয়ানমার কখনও স্বীকার করে না। তারা এ নিয়ে বরাবরই ব্লেমগেম করছে। ক’দিন আগে রাখাইন থেকে ‘রহস্যজনক’ একটি সন্ত্রাসী হামলার খবর বেরিয়েছে। অবশ্য আশার দিক হচ্ছে মিয়ানমার সেনা প্রধান রাখাইনে গণহত্যার স্বীকারোক্তি দিতে দিতে শুরু করেছেন। আর দেশটির কার্যকর নেতা অং সান সু চি আরও এক ধাপ এগিয়ে সেই স্বীকারোক্তিকে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন। যখন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আশা-নিরাশার দোলাচলে দোল খাচ্ছে তখনই দেশটি সফরে গেছেন এ সংক্রান্ত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বাংলাদেশ পক্ষের সদস্যরা। ১৩ই জানুয়ারি বিকালে ইয়াংগুন পৌঁছান পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের নেতৃত্বাধীন ওই দলের ১৪ সদস্য। সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্ত হন। নেপি’ডতে দেশটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ দল।
পাঠকের মতামত